ভ্রমন যে ৫টি পজেটিভ প্রভাব ফেলে আপনার জীবনে! 09/01/2018


ঘুরে বেড়াতে কে না পছন্দ করে। পাহাড়ের ওপাড়ের মেঘের দেশে অথবা সাগর পাড়ের রঙিন জীবনে যেতে শহুরে জীবনে ব্যস্ত অনেকেরই মন আনচান করে উঠে। অনেকেই নিজের ব্যস্ততা ফেলে জীবনকে ছুটি দিয়ে বেড়িয়ে পড়েন ঘুরে বেড়ানোর নেশায়, জীবনের খোঁজে। ঘুরে বেড়ানোর এই নেশা একজন মানুষকে শুধু আনন্দই দেয় না, তাকে অনেক জ্ঞান ও অনেক নতুন জিনিষের সাথে পরিচয় করায়।

নতুন জায়গায় ভ্রমণের সাথে নিত্যনতুন জ্ঞান একজন মানুষকে আরও ভালো মানুষ হতে সাহায্য করে। যে নিজের বিশ্ব সম্পর্কে যত জ্ঞান লাভ করে সে তত বেশি সমৃদ্ধ। তার আপন গন্ডি থেকে বের হওয়ার এই দুর্লভ বৈশিষ্ট্য তাকে অন্য সবার চাইতে আলাদা ভাবে পরিচিতি দেয়। আসুন দেখে নিই কিভাবে এই ঘুরে বেড়ানোর শখটি আপনাকে একজন নতুন মানুষ হিসেবে পরিচিতি দেয়।

ভ্রমণ সামাজিকতা বাড়ায়
আপন গন্ডি থেকে বেরিয়ে নতুন অজানার পথে পা বাড়ানো মানুষগুলো বন্ধুত্ব করতে অনেক বেশি দক্ষ। একই জায়গায় একটি পরিচিত গন্ডির মধ্যে থাকলে আশপাশের মানুষজনের সম্পর্কে ধারণা হয়ে যায়, নতুন কিছুই আর জানার থাকে না। তখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। এতে করে কমে আসে সামাজিকতা। নতুন একটি জায়গায় গিয়ে সেখানের মানুষের সাথে কথা বলে বন্ধুত্ব করার এই গুণটি সবার মধ্যে থাকে না। নতুন নতুন মানুষজন চেনা জানা তাদের জীবন সম্পর্কে জানা এই সবই সামাজিক কাজ। এর মধ্য দিয়েই একজন নিজেকে আরও সামাজিক ভাবে গড়ে তুলতে পারেন। সবার সাথে কথা বলে সুখ-দুঃখ জেনে নিয়ে সব কিছু ভাগাভাগি করে নেয়ার মনমানসিকতা তৈরি হয়।

ভ্রমনে বাড়ে আত্মবিশ্বাস
যখন আপনি বিশ্বের অজানা পথে হাঁটবেন অথবা একটি উঁচু পাহাড় অতিক্রম করবেন কিংবা গ্রেট বেরিয়ার রিফে লাফ দেবেন তখন নিজের উপর যে আস্থা নিয়ে আপনি এই কাজ গুলো করতে যাবেন, তার চাইতে অনেক বেশি আস্থাবান ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে যাবেন যখন কাজগুলো করা শেষ হবে। জীবন চলার পথে হোঁচট খেয়ে নিজের উপর আস্থা হারানো মানুষের সংখ্যার কমতি নেই। নিজের উপর আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে ঘুরে বেড়ানোর বিকল্প কমই আছে। অজানা এক জায়গায় গিয়ে সেখানের মানুষ ও অচেনা পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া, রোমহর্ষক ও উত্তেজনাপূর্ণ কাজ করতে পারলে আত্মবিশ্বাসী হন অনেকেই। ফিরে পান হারিয়ে যাওয়া জীবনের ছন্দ।

বুদ্ধিমান করে তোলে
বাসায় বসে এটা এভাবে হলে ঠিক হতো, ওটা সেভাবে হলে ভালো হবে- এই ধরনের যুক্তি বুদ্ধি অনেকেই দিতে পারে। আসল বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যিনি নিজে কোনো ধরনের পরিস্থিতি ভালো কিংবা খারাপ ঠান্ডা মাথায় সামলে নিতে পারেন। যারা বিভিন্ন জায়গা ঘোরেন তারা সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মত বুদ্ধি মাথায় রাখতে পারেন। ঠান্ডা মাথায় যে কোনো ধরনের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা অন্যান্য মানুষের তুলনায় পর্যটকদের মধ্যে বেশি। কারণ তারা নতুন নতুন মানুষের সাথে মেশেন, তাদের আচার-আচরণ সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখেন, কীভাবে কী করলে পরিস্থিতি ঠিক হবে এইসব ধারনাও রাখেন। কোন জায়গায় না গিয়ে সেই জায়গার ইতিহাস সংস্কৃতি ইত্যাদি জানা যায় ঠিকই কিন্তু বাস্তব জ্ঞান তার কাছে কিছুই নয়।

ভ্রমণ মানুষকে বাস্তববাদী করে
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গিয়ে সব ধরনের পরিবেশ দেখে শুনে মানুষ বুঝতে শেখে জীবনের আসল অর্থ কী। তখন ছোটখাটো অনেক ঘটনা যেগুলো আগে অনেক বড় ও জটিল মনে হতো তার সমাধান মেলে। নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে বিচার করার ক্ষমতা বাড়ায় যে ভ্রমণ করার নেশা তারই ফলাফল দেখা যায় বাস্তব জীবনে। ছোটখাটো মন খারাপ করার জিনিষকে তখন আসলেই তুচ্ছ মনে হয়। জীবনের অর্থটা পরিস্কার হতে শুরু করে। ভ্রমণ শেষে নিজের ঘরে ফেরত এসে বুঝতে পারা যায় আশেপাশের যা সব আগে অনেক মূল্য রাখত তা আসলে কতোটা মূল্য রাখে। সেই সব বন্ধু এবং তাদের বন্ধুত্বের গাঢ়তা উপলব্ধি করা যায় যে বন্ধুত্ব হয়েছিল ভ্রমণের সময়।

ভ্রমণ বাড়ায় সুখের অনুভূতি
গবেষকরা বলেন যারা ভ্রমণে যান তারা আর দশজন মানুষের চাইতে বেশি সুখী হন। ঘরের কোণায় বসে অতীত কিছু ভেবে কিংবা ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে যারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বসে থাকেন তাদের তুলনায় নতুন নতুন জায়গা ঘুরে ফিরে নিজের উপর যে আত্মবিশ্বাস আনতে পারে সেই প্রকৃত সুখী। ঘুরতে বের হলে মানুষের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। জীবনের অস্বস্তিকর ব্যস্ততা থেকে দূরে গিয়ে কিছুটা হলেও মন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ভ্রমণ মানুষকে আত্মবিশ্বাসী ও বাস্তববাদী করে। বাস্তববাদী মানুষের অল্পে খুশী থাকার গুণ তখন জীবনকে আরও সহজ ও আরও সুখী করে তোলে।

Leave a Comment