এক নজরে পুরো মানালি 09/01/2018


ভারতের হিমাচল প্রদেশের কুলু(Kullu) জেলায় এটির অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২,০৫০ মিটার বা ৬,৭২৬ ফিট এবং হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলা থেকে এর দূরত্ব ২৭০ কি.মি. বা ১৬৮ মাইল। ভারতে যতগুলো হিল ষ্টেশন আছে তার মধ্য একটি হলো মানালি। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত মানালি। এখানে এলে দেখতে পাবেন উঁচু নিচু বরফ আর পাথুরে পাহাড়ের এক অপূর্ব সমাহার আর সাথে রয়েছে কূলকূল শব্দে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে চলা বিপাশা/বিয়াস (Beas) নদীর এক অপরূপ সৌন্দর্য। মানালিতে গেলে মনে হবে প্রকৃতির এক অপার বিস্ময় ঠিক যেন আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে। যারা পাহাড়-পর্বত আর নদী ভালোবাসেন তাদের জন্য মানালি বেড়ানোর একটি আদর্শ জায়গা হয়ে উঠতে পারে।

কিভাবে যাবেন ?

মানালি যেতে হলে প্রথমে কোলকাতা থেকে ট্রেনে বা বিমানে করে ভারতের রাজধানী দিল্লী যেতে হবে। দিল্লী হলো কেন্দ্র বিন্দু (Central Transit) যেখান থেকে বিভিন্ন রুটের বাস ছাড়ে। মানালি যাওয়ার বাস দিল্লীর কাশ্মীরি গেট বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ে। কাশ্মীরি গেট বাস টার্মিনাল দিল্লীর সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল। সকল রুটের বাস এখান থেকে ছাড়ে।

মানালী যাওয়ার বাস দুই ধরনের হয়ে থাকে: পাবলিক আর প্রাইভেট পরিবহন। পাবলিক পরিবহনের মধ্যে হিমাচল এক্সপ্রেস হাইওয়ে আর প্রাইভেটের মধ্যে হিমাচল এসি ভোলভো এই দুটোই মানালির দিকে যায়। এসি ভোলভো বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কাশ্মীরি গেইট টার্মিনাল থেকে মানালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। প্রায় ১৪-১৫ ঘন্টা লাগে সড়ক পথে মানালি যেতে। এছাড়াও প্রাইভেট গাড়ি করে মানালি যাওয়া যায়। তখন প্রকার ভেদে ১৭০০-১৮০০ ভারতীয় রুপি খরচ হতে পারে। যারা বাসে করে যাবেন তাঁদের ক্ষেত্রে বাস ভাড়া এরকম পড়বেঃ দিল্লী-মানালিঃ- নন-এসিঃ ৫৮৫ রুপি এসি ভলভোঃ ১৪২০ রুপি।

কি কি দেখবেন?

হিন্দিতে মানালিকে বলা হয় “ধারতি কা সওয়ার্গ” বা “পৃথিবীর স্বর্গ”। এখানে এলে মনে হবে যেন কোন এক স্বর্গে চলে এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এতটাই বিমোহিত হতে হয় তখন ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। মানালিতে তেমন অনেক দর্শনীয় স্থান আছে যা একবার গেলে বার বার সেখানে ছুটে যেতে ইচ্ছে হবে। ঠিক তেমন কিছু দর্শনীয় স্থানসমূহ হলো:

রোহতাং পাস (Rohtang Pass):

এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৯৭৮ মিটার বা ১৩,০৫০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। মানালি শহর থেকে এর দূরত্ব ৫১ কিঃমিঃ বা ৩২ মাইল। এটি কুলু (Kullu), লাহাল (Lahaul) এবং স্পিতি (Spiti) উপত্যকার সাথে সংযুক্ত করে রেখেছে। পাহাড়ি রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ আর প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে রোহতাং পাসে যেতে হয়। এখানে এলে দেখতে পাবেন শ্বেতশুভ্র সুবিশাল পাহাড়ের সারি আর বিশাল বিশাল প্রস্থর খন্ড। যারা আইস স্কেটিং, টবগ্যানিং (Tobogganing) ইত্যাদি ভালোবাসেন তাদের জন্য সেখানে সুন্দর ব্যবস্থা আছে। যেহেতু সেখানকার আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা তাই সেখানে ওভারকোট, বুট ইত্যাদি ভাড়ায় পাওয়া যায়।


সোলাং ভ্যালি (Solang Valley):

এটি রোহতাং পাস যাওয়ার পথে পড়ে এবং এর দূরত্ব মানালি শহর থেকে ১৪ কি.মি. উত্তরপশ্চিম দিকে অবস্থিত। এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য সুপরিচিত। এখানে প্যারাসুটিং, প্যারাগ্লাইডিং, স্কেটিং ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। এখানে অনেক হোটেল মোটেল গড়ে উঠেছে তাই প্রকৃতিপ্রেমিদের এখানে থাকতে অসুবিধা হবে না।


রাহালা জলপ্রপাত (Rehala Falls):

এটি রোহতাং পাস থেকে ফেরার পথে পড়বে। এটি মানালির চমৎকার একটি জলপ্রপাত। এখানে গেলে দেখা যায় কিভাবে পাহাড়ের গা বেয়ে কূলকুল শব্দ করে জলরাশি নেমে বিপাশা/ বিয়াস নদীতে গিয়ে মিশছে।

 

ডেট গুলাবা (Dett Gulaba):

এখান থেকে চমৎকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। রেহালা জলপ্রপাত থেকে খানিকটা দূরে এর অবস্থান।


বিপাশা/বিয়াস নদ (Beas River):

শহরের একদম গাঁ ঘেষে কূলকুল রবে আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে চলা বিপাশা/বিয়াস নদী আসলেই প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময়। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৭০ কি:মি: বা ২৯০ মাইল যা পাঞ্জাবের সুটলেজ (Sutlej) নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই নদীর পানি ভীষণ ঠাণ্ডা আর এর স্রোত বেশ বিপজ্জনক। যারা রিভার রাফটিং (River Rafting) করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এখানে রাফটিং এর ভালো ব্যবস্থা আছে।

এখানে দেখার মত আরও আছে হাদিম্বা দেবীর মন্দির, গুম্ফা মনেস্টারি (Gumpha Monastery), মানালি ইকোপার্ক ইত্যাদি।

এসব দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেতে হলে গাড়ি ছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই কারন গাড়ি ছাড়া আর কোন যানবাহন সেসব জায়গাগুলোতে যেতে পারে না। আর গাড়ি ভাড়া করতে হলে আপনাকে শুধুমাত্র মানালি শহর থেকে ভাড়া করতে হবে। শহরে অনেক গাড়ির স্ট্যান্ড পাবেন। তাই দরদাম আর দক্ষ ড্রাইভার ঠিক করে আপনাকে গাড়ি ঠিক করে নিতে হবে।

কোথায় থাকবেন ?

বড় বড় পাহাড়ের মাঝখানে গড়ে উঠেছে ছোট শহর মানালি। এখানের মল রোড (Mall Road) সুবিখ্যাত। মল রোডে অনেক হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেছে। প্রকারভেদে হোটেলের ভাড়া ১৫০০-১৮০০ ভারতীয় রুপী হতে পারে। হোটেলগুলোতে হিটার সিস্টেমের (Heater System) সুব্যবস্থা আছে। কেনাকাটার জন্য মল রোডে অনেক শপিং মল আছে যেগুলো হোটেল থেকে একদম হেঁটে যাওয়া যায়।

 

কোথায় খাবেন ?

মানালিতে অনেক ভালো মানের খাবারের হোটেল আছে। যেমন: গুজরাটি, মাদ্রাজি, পাঞ্জাবি, বাঙালি ইত্যাদি। বাঙালি খাবার হোটেলের মধ্য আছে Hotel Adarsh, New Ashapuri Bhojonaloy, Ashapuri Bengali Restaurant ইত্যাদি যেগুলো মল রোডে অবস্থিত।বাঙালি হোটেলের মধ্যে শান্তিনিকেতন হোটেল বেশ প্রসিদ্ধ।

মানালি থেকে অন্যান্য শহর

অনেকেই শিমলার সাথে মানালিকে মিলিয়ে ফেলেন। আসলে মানালি হলো হিমাচল প্রদেশের একটি জেলা শহর আর শিমলা হলো তার রাজধানী। শিমলার সাথে মানালির তুলনা হয় না কারন দু'টো স্থানের রূপ দুই রকম। তাই অনেকেই শিমলা হয়ে মানালি বেড়াতে আসেন। তাই সময় হাতে রেখে অনেকেই শিমলায় ঘুড়তে আসেন । অনেকে আবার কুলু হয়ে মানালিতে যান। কুলুর নিজস্ব প্রাকৃতিক রূপ আছে তাই অনেকে কুলু হয়ে মানালিতে বেড়াতে আসেন। মানালি থেকে কুলু গেলে কমপক্ষে ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

১। মানালি প্রধানত শীতপ্রধান অঞ্চল। এখানে পুরো বছর ঠাণ্ডা থাকে। যারা মানালি যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তারা অবশ্যই গরম কাপড় যেমন সোয়েটার, কার্ডিগান, জ্যাকেট, ওভারকোট, কানটুপী, কেডস, হাতমোজা ইত্যাদি সঙ্গে রাখবেন।

২। মানালি যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। অনেকে তুষারপাত দেখার জন্য নভেম্বর-ডিসেম্বরে যেতে চান, এসময় প্রবল তুষারপাতের ফলে রাস্তা বন্ধ থাকে।

৩। পরিবেশের ব্যাপারে হিমাচল প্রদেশ সরকার বেশ সতর্ক। রোহতাং পাস যাওয়ার সময় এন্ট্রি পারমিট করে নিতে হয় আর পরিবেশ দূষণরোধে সতর্ক করে দেওয়া হয়। চেষ্টা করবেন রোহতাং পাসে যেখানে সেখানে খাবারের প্যাকেট না ফেলতে। অন্যথায় অনেক টাকার জরিমানা দেওয়া হতে পারে।

৪। মানালিতে ডলার ভাঙানোর ভালো কোন ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে ভালো হয় মানালিতে যাওয়ার পূর্বে কোলকাতা থেকে ডলার ভাঙানো।

৫। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে এইটা মাথায় রাখবেন।

৬। মানালির রাস্তাঘাট পুরোটাই পাহাড়ি রাস্তা আর বেশ বিপজ্জনক। তাই গাড়ি ভাড়া করার সময়ে দক্ষ ড্রাইভার ঠিক করে নিন। কারন একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না।

Leave a Comment