পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে চীনের মহাপ্রাচীর 26/03/2020


বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা ভাইরাস সংকটে সর্বত্র মানুষের চলাচলকে সীমিত করা হয়। সংকট চলাকালীন বিশ্বের সর্বত্র দর্শনীয় স্থানগুলোকে বন্ধ রাখা হয়। মানুষের স্বার্থে নেয়া এই সিদ্ধান্ত, যা সাময়িক। ক্রান্তিলগ্ন পেরিয়ে যখন বিশ্ব তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসবে, ভ্রমণ ও তখন স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। করোনা ভাইরাস যে দেশ থেকে প্রথমে উৎপত্তি লাভ করে সেই চীন বিশ্বের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ, মহাপ্রাচীর তথা গ্রেট ওয়ালের একটি অংশ পর্যটকদের জন্য পুনরায় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। করোনার ছোবল থেকে স্বাভাবিক হতে থাকা চীনাদের অনেক ভ্রমণ প্রেমীকেই মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বেড়াতে দেখা গেছে এই জায়গায়।

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীন করোনা ভাইরাস থেকে উতরে উঠে ধীরে ধীরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সেখানকার সব কিছু আবার প্রাণ পেতে শুরু করেছে। মানুষ কাজে যাচ্ছে, দোকান-পাট খুলতে শুরু করেছে, যানবাহন চলা শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেট ওয়ালের ব্যাডালিং অংশ উন্মুক্ত করা হলো। বেইজিয়ের উত্তর-পূর্বে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এটি।

বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মানবসৃষ্ট স্থাপত্য চীনের মহাপ্রাচীর পর্যটকদের সবচেয়ে জনপ্রিয় অংশ ব্যাডালিং। এর দেয়াল ২৬ ফুট উঁচু ও ১৬ ফুট প্রশস্ত। প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক ভ্রমণপ্রেমী এখানে ঘুরতে আসেন। তবে চীন সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, আপাতত আগের তুলনায় ৩০ শতাংশ দর্শনার্থীকে মহাপ্রাচীরে বেড়ানোর সুযোগ দেবে।

চীনের মহাপ্রাচীর- ব্যাডালিং অংশ।

চীনের মহাপ্রাচীরের ব্যাডালিং অংশ। ছবি : সিএনএন

চীনের মহাপ্রাচীর এর প্রবেশপত্র মিলবে যেভাবে:

মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন ট্রাভেল এ জানানো হয়, প্রবেশপত্র পেতে অবশ্যই অগ্রিম টিকেট বুকিং করতে হবে। চীনের উইচ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে অথবা ব্যাডালিং গ্রেট ওয়ালের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে টিকিট বুকিং দিতে হবে।

এই কাজ সমাপ্তির পরে পর্যটকরা প্রাচীরের ফটকে এলে তাদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করবে কর্তৃপক্ষ। তাই নিবন্ধিত হেলথ কিউআর কোড থাকা চাই প্রত্যেকের। এতে আলিপে অথবা উইচ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আইডি কার্ড সংযুক্ত থাকে। এর মাধ্যমে সবুজ আলো জ্বললে বোঝা যায় দর্শনার্থী সুস্থ।

ছবি : ওয়াশিংটন পোস্ট

এসব ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রত্যেক দর্শনার্থীকে মাস্ক পরতে এবং পাশাপাশি সবসময় একে অপরের কাছ থেকে এক মিটারের দূরত্ব বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়। প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা অবধি খোলা থাকবে গ্রেট ওয়াল অব ব্যাডালিং। স্বাস্থ্যকর্মী এবং কর্মরত সামরিক সদস্যরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারলেও তাদেরকে অন্য প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হবে।

টিকেট মূল্য :

সাধারণত অফ-পিক মৌসুমে প্রতিটি প্রবেশপত্রের মূল্য থাকে ৩৫ আরএমবি(চীনা ইউয়ান) বা ৫ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪২২ টাকা প্রায়। এই সময়টা আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত। তবে, পহেলা এপ্রিল থেকে পহেলা অক্টোবর পর্যন্ত মৌসুমকালীন টিকিট মূল্য বেড়ে হবে ৪০ আরএমবি বা ৫ দশমিক ৬৫ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৮২ টাকা।

তবে, গ্রেট ওয়ালের অন্যান্য অংশ বন্ধ থাকবে। এছাড়া ব্যাডালিংয়ে ক্যাবল কার ও চায়না গ্রেট ওয়াল মিউজিয়াম আপাতত খুলছে না। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত গ্রেট ওয়ালে প্রতিবছর ১ কোটি মানুষ বেড়াতে আসে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে এটি বন্ধ ছিল।

চীনের মহাপ্রাচীর

ছবি : সিএনএন

ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম চীনের গ্রেট ওয়াল। এর মোট দৈর্ঘ্য ২১ হাজার ১৯৬ কিলোমিটার। চীনের উত্তর সীমান্তকে মঙ্গোলীয়দের হাত থেকে রক্ষার জন্য খ্রিস্টপূর্ব ২২০-২০৬ সনে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। অনেকের ধারণা, ১০ লাখ শ্রমিক এতে কাজ করেছিল। তাদের মধ্যে ৩ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। মিং যুগেও এই প্রাচীরের অনেকাংশ নির্মাণ হয়।

Leave a Comment