দুর্গা পুজায় ভারত ভ্রমণ            11/09/2019
             
			 
             
             
              আমাদের দেশের তথা পৃথিবীর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান এবং জনপ্রিয় উৎসব হল দুর্গাপূজা। বছরে দুইবার এই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকেঃ শরত কালের শারদীয় দুর্গাপূজা এবং বসন্তকালের বাসন্তি দুর্গাপূজা। এর মধ্যে শারদীয় পুজাটি সর্বাধিক জাঁকজমকের সাথে পালন করা হয়ে থাকে।
শারদীয় দুর্গা পুজার মূলত দুর্গতিনাশিনী খ্যাত দেবী দুর্গার আগমন এবং তাঁর হাতে দানব মহিষাসুরের পতনের ঘটনার উপর নির্ভরশীল। কথিত আছে যে অসুরদের অধিপতি মহিষাসুর এক সময় অনেক ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। তাকে দমন করতে দেবতাদের সম্মিলিত শক্তি থেকে দুর্গার জন্ম হয়। অতঃপর তিনি মহিষাসুরকে বধের মাধ্যমে আবার শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা তাই এই সময়কে অত্যন্ত আনন্দঘন একটি উপলক্ষ্য হিসেবে পালন করে থাকে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশে অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে পুজা পালন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পুজা উদযাপনে জাকজমকের কোন কমতি থাকে না। তবুও বলা চলে হিন্দু প্রধান দেশ হিসেবে ভারতের পুজা গুলো যেন একটু বেশী উদ্দীপনার সাথেই পালন করা হয়ে থাকে। এজন্য প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ ভারতে বেড়াতে যান পুজা পালনের উদ্দেশ্যে।
 পুজা মানেই ধুপের গন্ধে ছেয়ে থাকা সব দিন রাত্রি।
পুজা মানেই ধুপের গন্ধে ছেয়ে থাকা সব দিন রাত্রি।
 
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে বেড়াতে যাওয়া প্রায় ৩ মিলিয়ন পর্যটকের সিংহ ভাগই যায় বছরের এই সময়টাতে। লক্ষ্য থাকে ভারতের মাটিতে পুজা উদযাপনের এবং ভাল একটা সময় কাটানোর। এজন্য বাঙালি হিন্দূ পর্যটকদের মাঝে কিছু বিশেষ গন্তব্যের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। গন্তব্যের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে গেলে সবার আগে চলে আসবে কলকাতার নাম। এর পর যথাক্রমে মুম্বাই, দিল্লী, গুয়াহাটি, বারনাসি ও পাটনা রয়েছে এই তালিকায়। শারদীয় দূর্গাপূজায় ভারত ভ্রমনের আজকের প্রথম পর্ব কলকাতা ঘিরেই..
কলকাতা
কলকাতার পুজা উদযাপন যেন অন্যদের থেকে একটু আলাদাই হয়ে থাকে। কলকাতার শারদীয় দুর্গাপূজা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই না, এর থেকেও যেন বেশী কিছু। পুজা চলাকালীন সময়ে এর স্পষ্ট ছোয়া দেখতে পাওয়া যায় কলকাতার ঘরে ঘরে। পুজার সময় কলকাতা তার বর্ণিলতম সাজে সজ্জিত হয়। পুজার সুসজ্জিত প্যান্ডেল, সুন্দর কারুকাযে তৈরী করা প্রতিমার সমারোহ, ধুপের সুগন্ধ, সুস্বাদু সব স্ট্রীট ফুড আর চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জার বদৌলতে এই পাঁচ দিনের জন্য কলকাতা হয়ে ওঠে কলরব ও আনন্দমুখর জনস্রোতের নগরী।
 কলকাতার পুজা এবং বিখ্যাত ধুঞ্চি নৃত্য
 কলকাতার পুজা এবং বিখ্যাত ধুঞ্চি নৃত্য
এখানে রয়েছে বহু সংখ্যক মণ্ডপ। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাগবাজার মন্ডপ থেকে শুরু করে হালের কলেজ স্কয়ার মন্ডপ – দর্শনার্থীদের অবস্থা দাড়ায় কোনটা রেখে কোনটা দেখব! এছাড়া বিশিষ্ট বনেদি পুজা তো রয়েছেই। বনেদি পুজা আয়োজনে শোভা বাজার রাজবাড়ি ও রানী রাসমণি বাড়ির সুখ্যাতি রয়েছে সেই আদি আমল থেকে। এসব আকর্ষণীয় মণ্ডপ দেখার পাশাপাশি উপভোগ করতে পারবেন নানারকম সুস্বাদু ও উপাদেয় ভোগ। এছাড়া সব শেষ আকর্ষণ হিসেবে দেবীর জাঁকজমকপূর্ণ বিসর্জনও দেখতে পাবেন। কলকাতার পুজা উদযাপন এতই বর্ণাঢ্য যে এই বছর (২০১৯) এই উৎসবকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে অন্তর্ভুক্তির জন্য নমিনেশন দেয়া হয়েছে। 
 
কিভাবে যাবেন কলকাতা
প্রতিবেশী দেশের শহর; ঢাকা থেকে দূরত্ব বলতে গেলে ৩০০ কিলোমিটারের কিছু বেশী। তাই বিভিন্নভাবেই যাওয়া যায়। যদি একটু আরামের সাথে ভ্রমণ করতে চান তাহলে বিমানে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে কলকাতা রুটটি অনেক ব্যাস্ত একটি রুট। প্রতিদিন প্রচুর লোক যাওয়া আসা করে থাকেন। তাই ফ্লাইটের সংখ্যাও বেশী আবার প্রতিযোগিতাও বেশী। ভাল হয় যদি আপনি যাত্রার বেশ আগে থেকেই টিকিট বুকিং করে রাখেন। তাতে খরচ কিছু কম ও হতে পারে।
ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে পারবেন বাংলাদেশ বিমান, স্পাইস জেট, এয়ার ইন্ডিয়া অথবা জেট এয়ারওয়েজ এ। এছাড়া দেশী বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে আছে রিজেনট এয়ারওয়েজ, নভো এয়ার, ইউ এস বাংলা ইত্যাদি। এই বিমানগুলোতে কলকাতা গেলে খরচ অপেক্ষাকৃত কম হবে (বাংলাদেশী টাকায় ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা)। এছাড়া আরও বিমান সংস্থা যেমন থাই এয়ার, শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স, চায়না ইস্টার্ন, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ ইত্যাদিতেও কলকাতা যেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে একটু বেশী টাকা গুনতে হবে আপনাকে।