যে পাঁচটি সিনেমা ট্র্যাভেলারদের অবশ্যই দেখা উচিৎ! 11/01/2018


এ ধরায় ভ্রমণ বিষয়ক অসংখ্য,অগণিত সিনেমা নির্মিত হয়েছে। একেকজনের একেকরকম সিনেমা পছন্দ হয়, ভাল লাগে। দেখা যাবে, যে সিনেমাকে আমি পছন্দের শীর্ষে রাখি; সেটাকে অন্য কোন মুভিপ্রেমী গোনাতেই রাখেন না! এমনটাই স্বাভাবিক। ভালো লাগা এক প্রকার আপেক্ষিকতা। যার কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, থাকার কথাও নয়। আমি আমার দেখা অন্যতম সেরা কিছু ‘ট্রাভেল মুভি’ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে রিভিউ (সেই অর্থে ঠিক রিভিউ নয়। পাঠকদের বোঝার ক্ষেত্রে ‘গল্প পরিচিতি’ বলা যায়) লিখলাম। আজ দেয়া হল ভ্রমণ বিষয়ক সিনেমার প্রথম পর্ব। পরের পর্ব আরেকদিন।

যে সিনেমাগুলো দেখলে রোমাঞ্চের বাড়ন্ত জুতো পায়ে লেগে থাকবে আঠালো চুইংগামের মতো আর প্রতিকূলতা পাড়ি দেবার অবিচল দর্শন অজান্তেই বাসা বাধবে মনের ভেতরে। মাথার ভেতরে সদা কিলবিল করবে ‘ভ্রমণ পোকা’ আর অজানাকে জানার তীব্র বাসনা..

১। ইনটু দ্য ওয়াইল্ড (২০০৭)

শুরুতেই ‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড’ (২০০৭) সিনেমার কথা উঠে আসে। গ্রাজুয়েশন শেষ করে পরিবার,বাড়িঘর,শহুরে আরাম আয়েশ ইত্যাদি প্রায় সব ল্যাঠা চুকিয়ে একজন দৃঢ়চেতা রোমাঞ্চপ্রিয় যুবকের ভবঘুরের জীবন বেছে নেয়া। একাকি,অজানার উদ্দেশে,প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে.. যে ‘সুপারট্রাম্প’ সমাজের মুখস্ত সামাজিকতা থেকে অহর্নিশ মুক্তি চায় । মনে প্রবলভাবে দাগ কেটে যাবার মতো এক সিনেমা।

২। দ্য মোটরসাইকেল ডায়রিজ (২০০৪)

তারপরে বলা যায় ‘দ্য মোটরসাইকেল ডায়রিজ’ (২০০৪) সিনেমার নাম। মহান বিপ্লবী চে গুয়েভারার জীবনীর কিয়দাংশ এটি। যে সময়টাতে মেডিকেল স্টুডেন্ট চে তার বায়োকেমিস্ট বন্ধু গ্রানাডোকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে চষে বেড়ায় দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ। মোটরসাইকেল নষ্ট, পকেটে কানাকড়ি নেই, তবু মাসের পর মাস চলতে থাকে বন্ধুর পথচলা। প্রিয় অভিনেতা গায়েল গার্সিয়া বার্নাল অভিনীত এক অনবদ্য সিনেমা।

৩। কন তিকি (২০১২)

এরপর উল্লেখ করা যেতে পারে ‘কন তিকি’ (২০১২) সিনেমার কথা। এটি অনতিক্রম্য মহাসাগর পাড়ি দেবার গল্প। চোয়ালবদ্ধ সঙ্কল্পের সিনেমা। সিনেমাটিতে দেখা যায়- একদল পাগলাটে এক্সপ্লোরারের শুধুমাত্র কাঠের ভেলায় ভর করে প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় চার হাজার তিন শ’ মাইল দুর্গম পথ পাড়ি দেবার বিস্ময়কর কাহিনী, যা রূপকথার মতো শোনায়। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত একটি স্ক্যান্ডেনেভিয়ান সিনেমা।

৪। ওয়ান টোয়েন্টি সেভেন আওয়ার্স (২০১০)

‘ওয়ান টোয়েন্টি সেভেন আওয়ার্স'(২০১০) সিনেমার নাম শুনেছেন প্রায় অনেকেই। অনেকের কাছেই এটি ট্রাভেল জনরায় ‘বেস্ট সারভাইভাল মুভি’ হিসেবে পরিচিত। টগবগে এক তরুণ পর্বতারোহীর পাহাড়ের ফাঁদে আটকে পড়া, মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখা এবং তা থেকে উত্তরণের নিরন্তর প্রচেষ্টা। ছবিটি সুকান্তের পঙ্কতিগুলো বারবার মনে করিয়ে দেয়। বিখ্যাত নির্মাতা ড্যানি বয়েল পরিচালিত সিনেমা।

৫। গুডবাই বার্লিন (২০১৬)

অতঃপর তুলি ‘গুডবাই বার্লিন'(২০১৬) নামক জার্মান সিনেমার প্রসঙ্গ। এটির অরিজিনাল নাম ও উচ্চারণ বড়ই খটমটে ও গোলমেলে। তাই সেদিকে আর পা বাড়ালাম না। গাড়ি চুরি করে ভিন্ন রকম মানসিকতার দুই কিশোরের জার্মানজুড়ে শহরে পল্লীতে সবুজ প্রান্তরে দিনরাত টো টো করে ঘুরে বেড়ানো এবং বাড়ি ফিরে কোন এক বিশৃঙ্খল বিন্দুতে জীবনের মানের আচমকা স্পর্শ টের পাওয়া- এই হল গল্প। মন ছুঁয়ে যাবার মতো সিনেমা।

পরিশেষে বলি- সিনেমা দেখুন আর নাই দেখুন,সময় পেলেই ঘুরে বেড়ান। পয়সা জমিয়ে ঘুরে বড়ান। বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ান। প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে পাড়ি জমান পাহাড়ে পর্বতে সাগরে মেঘের কিনারে। অন্বেষণ করুন নতুন অভিজ্ঞতার ডালি। অনাঘ্রাতা ঘাসফুলের ঘ্রাণ নিন প্রাণ খুলে। আর বিরতিহীন গান শুনুন একান্ত কারো কাঁধে মাথা রেখে। বর্ণালি ভ্রমণে এয়ারফোনের দুটো তার দুলতে থাকুক দুটো মানুষের কানে..

“চল নামি দূরের পথে একসাথে দুজনায়, ছায়া সাথী হও আমার ভালবাসার পথচলায়”

Leave a Comment