ভারতীয় ভিসা যে কারণে প্রত্যাখ্যান হয় 08/09/2022


ভ্রমণ পিপাসু বা বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য দেশের বাইরে বেস্ট ডেস্টিনেশন নিঃসন্দেহে ইন্ডিয়া! অনেক ভারত বিদ্বেষী পরিচিতজনকেও আমি ঘন্টার পর ঘন্টা ভিসার লাইনে দাড়িয়ে ঘামতে দেখেছি, বর্ডারে ঢোকার জন্য লাইনে দাড়িয়ে রোদে পুড়তে দেখেছি। দীর্ঘ একটা ফরম সময় নিয়ে পূরণ করে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ছোট্ট কিছু ভুলের কারনে অনেকবার একই ভিসা পাওয়া সত্বেও বা ফ্রেশ পাসপোর্টেও আপনার ভিসা রিজেক্ট হতে পারে! পড়ে নিতে পারেন সেই ছোট্ট কারণগুলো!

 

কম খরচে ঘোরাঘুরির জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য ভারত। মূলত স্থলপথে যাতায়াত করা সম্ভব বলেই খরচ কমানো সম্ভব হয় অনেকটাই। এছাড়া, শুধু বাংলাদেশী পর্যটক নয়, বৈচিত্র‌্যময় ভারত সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছেই জনপ্রিয়। তবে ভারতে যেতে হলে প্রয়োজন পড়ে ভিসার। আমাদের সাইটের সবচেয়ে জনপ্রিয় আর্টিকেলটি দেখে সহজেই ভারতের ভিসার আবেদন করতে পারবেন।

আজকে আলোচনা করবো ভারতের ভিসা প্রত্যাখ্যান হবার কারণগুলো নিয়ে। মনে করেন আপনারা চারজন বন্ধু মিলে ভারতে যাওয়ার জন্য একসাথে আবেদন করলেন, তিনজনই ভিসা পেলো সহজেই, শুধু আপনারটাই দেখলেন খালি পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হয়েছে। ভিসাতো দেয়ই নাই, কোন কারণও ব্যাখ্যা করা নেই, কেন ভিসা দেয়া হলোনা। এখন হয়তো পুরো ট্রিপই ভেস্তে গেলো, বা বাকী বন্ধুরা মন খারাপ করে আপনাকে ছাড়াই গেলো।

ভারতের ভিসা সঠিকভাবে আবেদন করলে প্রত্যাখ্যান হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সমস্যা হচ্ছে ভিসা প্রত্যাখ্যান করলে ভারতীয় দূতাবাস এর কারণ ব্যাখ্যা করবেনা। তখন আপনাকেই নিজে নিজে নিচের কারণগুলো দেখে বুঝে নিতে হবে ঠিক কারণে প্রত্যাখ্যান করা হলো। সেটা বুঝতে পারলে কাগজপত্র ঠিক-ঠাক করে পরের দিনই আবার আবেদন করতে পারবেন এবং বলা যায় নিশ্চিতভাবেই ভিসা পাবেন।

১. আবেদনপত্রে ভুল: সবচেয়ে বেশি ভিসা প্রত্যাখ্যানের ঘটনা করে আবেদনপত্র পূরণ করার সময় তুচ্ছ ভুল করার জন্য। যেমন নিজের নামের বানান ভুল হওয়া, পিতার নাম/মাতার নামের বানান ভুল করা, নামের একটি অংশ বাদ পড়া বা অতিরিক্ত যোগ করে ফেলা। এছাড়া অনেকে পাসপোর্টের তথ্য লিখতে ভুল করে থাকেন। যেমন পাসপোর্ট নাম্বার একটি বেশি/কম দেয়া, নাম্বারের আগের বর্ণগুলো বাদ দেয়া এসব। এধরণের সমস্যার জন্য বাতিল হতে পারে আবেদনপত্র।

২. নকল ডকুমেন্ট সংযুক্তি: ভিসার আবেদনপত্রের সাথে কোন ধরণের জাল ডকুমেন্ট দিলে সেই আবেদনপত্র বাতিল হতে পারে। সাধারণত ভিসার সাথে জাতীয় পরিচয় পত্র, অফিসের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট, বর্তমান ঠিকানার স্বপক্ষে প্রমাণপত্র, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ এসব কাগজপত্র জমা দেয়া হয়। এর কোনটি জাল করে দিলে এবং সেটা ধরা পড়লে সেই আবেদনপত্রটি প্রত্যাখান করা হয়।

৩. পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র: অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সাথে পাসপোর্টের তথ্যের কিছুটা অমিল আছে। এধরণের ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়া কঠিন হতে পারে। যদি জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকে তাহলে সেটা সংশোধন করে নতুন পরিচয়পত্র তুলে তবে আবেদন করবেন। এছাড়া জন্ম সনদের তথ্য ঠিক থাকলে জাতীয় পরিচয় পত্রে পরিবর্তে সেটা দিয়ে আবেদন করতে পারেন।

জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যের সাথে মিল থাকতে হবে পাসপোর্টের তথ্যের ছবি নির্বাচন কমিশন

৪. বর্তমান ঠিকানা: ভারতীয় ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার বর্তমান ঠিকানার স্বপক্ষে একটি প্রমাণপত্র দেয়া লাগে। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে যে ইউটিলিটি বিলের কপি দেয়া হয়েছে তার সাথে আবেদনপত্রে দেয়া ঠিকানার মিল নেই।  এজন্য ভিসা আবেদন করার সময় বর্তমান ঠিকানা যেটা বিলে দেয়া আছে সেটাই লিখবেন। এছাড়া অনেকে তার পাসপোর্টের বর্তমান ঠিকানা লিখে দেয়, এটাও করা যাবেনা।

৫. ছবি: ভিসার আবেদনের সাথে ২” * ২” সদ্যতোলা ছবি দিতে হয়। সদ্য তোলা বলতে তিন মাসের বেশি পুরণো নয় এমন ছবি বুঝানো হয়। কিন্তু অনেকে দেখা যায় পাসপোর্ট সাইজের ছবি দেন। আবার অনেকে দশ বছরের পুরণো ছবি দেন, যেটার সাথে তার পাসপোর্টের ছবির সাথেই মিলেনা। এছাড়া আগে ভিসা আবেদন করলে পুরণো ছবি ভিসায় থাকে, সেই ছবি দিয়ে আবার আবেদন করেন অনেকে। ছবির কারণেও ভিসা প্রত্যাখ্যান হতে পারে।

ছবি হতে হবে ২”*২” এবং ডিজিটাল ছবি ও ফরমে লাগানো ছবি একই হতে হবে

৬. ট্যুরিস্ট ভিসায় ওভারস্টে: ভিসা আবেদন করার সময় আগের ভিসার তথ্য জমা দিতে হয়। আগে কোন ট্যুরিস্ট ভিসায় যদি ওভার স্টে (ভিসার মেয়াদের পরেও থাকল) থাকে তবে পরবর্তীতে ভিসা নাও দিতে পারে। এছাড়া ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে স্থলবন্দর ব্যবহার করে নেপাল বা ভুটান গেলে, আবেদন পত্র রিফিউজড হবে এবং সেই সাথে পাসপোর্টে সিলও মেরে দিবে যাতে নিকট ভবিষ্যতে ভিসা না পায়। এসব ক্ষেত্রে ট্রানজিট ভিসা নিয়ে যাওয়া যাবে।

৭. আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণ: ভিসার আবেদনের সাথে আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট অথবা ক্রেডিট কার্ড ও এন্ডোর্সমেন্টের পেইজ অথবা অন্তত ডলার এন্ডোর্স করা থাকতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাখানের ঘটনা ঘটছে এটা নিয়ে। মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার এন্ডোর্স করলে হবেনা, নিতে হবে ব্যাংক থেকে। প্রিপেইড কার্ড (শুধুমাত্র স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া) দিয়েও ভিসা দিচ্ছেনা। এছাড়া ব্যাংকের স্ট্যাটমেন্টে অন্তত ২০,০০০ টাকা ক্লোজিং ব্যালেন্স থাকা বাঞ্চনীয়। আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণে অসঙ্গতি থাকলে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে।

সঠিক নিয়মে ডলার এনডোর্স করা থাকতে হবে। ছবি বিডিনিউজ২৪.কম

৮. এনওসি: অনেকে অফিস থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) না নিয়ে নকল এনওসি আবেদনপত্রের সাথে জমা দেন। অনেকে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে পেশাগত তথ্য ভুল দেন। এসব কারণে প্রত্যাখাত হয় ভিসা।

৯. পুরণো পাসপোর্ট: ভারতীয় ভিসার ক্ষেত্রে পুরণো সব পাসপোর্ট জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। অনেকে পুরণো পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন বা ভিসা আবেদনপত্রের সময় জমা দেন না। এসব ক্ষেত্রে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হতে পারে। পুরণো পাসপোর্ট হারিয়ে থাকলে থানায় জিডি করে জিডির কপি সঙ্গে জমা দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করবেন।

মনে রাখবেন খালি পাসপোর্ট ফেরত পাওয়া অর্থ উপরের কোন একটি কারণে আপনাকে ভিসা দেয়া হয়নি। এরপর আবেদন করার সময় ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে “নো” দিবেন। যদি এমন হয় আপনার ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং পাসপোর্টে একটি সিলসহ নাম্বার দেয়া আছে এর অর্থ আপনার ভিসা প্রত্যাখান করা হয়েছে। নিকট সময়ে আপনি আর ভিসা পাবেন না, অন্তত এক বছর পরে আবেদন করতে হবে।

 

Leave a Comment