বিথঙ্গল এর ছোট গল্প 09/02/2020


আপনি কি টাইম ট্রাভেল করতে চান? ২০১৮ সাল থেকে অনেকটা পেছনে ফিরে বেড়িয়ে আসতে চান? তাহলে আপনার জন্যে এই বিথঙ্গল ভ্রমনটা একটা রোমাঞ্চকর অভীজ্ঞতা হতে চলেছে!!!

 

কথিত আছে, ১৪৫০খ্রিস্টাব্দে প্রভু জগৎ মোহন নামে এক সাধক পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই বানিয়াচংয়েই । সৃষ্টিকর্তার বিভিন্ন লীলা দেখে বিমোহিত হয়ে তিনি নিজেই সৃষ্টিকর্তার স্বরুপ সন্ধানে ভারতবর্ষের বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে সাধনা করে বেড়িয়েছিলেন। সেই সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে তিনি নিজ এলাকায় ফিরে এসে এই আশ্রম তৈরি করে ছিলেন আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশত বছর পূর্বে । সেটিই এখন বিথঙ্গল আঁখড়া নামে পরিচিত ।

আমি যখন প্রথম বিথঙ্গল যাই তখন আমার মনে হয়েছে ওই জায়গাটা এখনো ঠিক যেন ৪-৫শ বছর পিছিয়েই রয়েছে । আধুনিক নগর সভ্যাতা এখনো গ্রাস করতে পারেনি বিথঙ্গলকে । আর তাছাড়া, বিথঙ্গল যেতে হয় হাওড়ের উপড় দিয়ে ছোট ট্রলারে করে । প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টার পথ । হাওড়ের সৌন্দর্য যে কি সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সত্যই দুঃসাধ্য । আর গ্রুপের নিয়মানুযায়ী মাত্র ৫টি ছবি দিয়ে বিথঙ্গলের সৌন্দর্য দেখানো তো আরো কঠিন । তাই আমি আমার ফ্লিকার একাউন্টের একটি লিংক কমেন্টে দিয়ে দিবো অথবা আমার প্রোফাইলে বিথঙ্গল ট্যুরের একটি অ্যালবাম দেয়া আছে সেখান থেকেও দেখে নিতে পারেন হাওড় বেষ্টিত বিথঙ্গলের সৌন্দর্য । বিথঙ্গল আশ্রমটি আসলে হিন্দু ধর্মীয় একটি আশ্রম হলেও ছুটির দিন গুলোতে সেখানে সব ধর্মেই মানুষ বেড়াতে আসেন । বিথঙ্গলে আছে একটি ছোট্টো বাজার । সেখানে অবশ্যি রাতে থাকার মতো সেরকম ব্যাবস্থা নেই, তবে সেখানে অতি সুলভ মূল্যে খাবার আর হাওড়ের তাজা মাছ উপভোগ করতে পারবেন । বিথঙ্গলের আসে পাশে অবশ্যি তার মতোই একই রকম আর্কিটেকচারের আরো কিছু আশ্রম রয়েছে । তার মধ্যে "দিল্লির আখঁড়া" নামে আরেকটি আশ্রম উল্লেখযোগ্য । সময় থাকলে সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন ।

এবার বলি কিভাবে যাবেন সেখানে, যদি ঢাকা থেকে যেতে চান তবে, প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে হবিগঞ্জ জেলায় । মহাখালী থেকে এনা এবং সায়েদাবাদ থেকে দিগন্ত এবং অগ্রদূত পরিবহনের বাস পাওয়া যায় । তবে দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে চাইলে, এনার রাত ১২টায় একটা বাস আছে, সেটা আপনাকে খুব ভোরেই নামিয়ে দেবে হবিগঞ্জ বাস টার্মিনালে । সেখান থেকে শহরের ঠিক অন্য প্রান্তে "কালারডোবা" নামক একটা জায়গায় আপনাদের যেতে হবে । বাস ট্রামিনাল থেকে রিক্সায় যেতে ৩০/৪০ টাকার মতো ভাড়া লাগবে সেখানে যেতে । সেখান থেকেই বিথঙ্গলের ট্রলার ছাড়ে । ট্রলার গুলো সাধারণত রিজার্ভ যায়, ভাড়া ১৫০০ থেকে ২০০০ এর মতো হবে। রিজার্ভ না নিয়ে এমনিতে যেতে গেলে আপনাকে ট্রলার ভরার জন্যে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হতে পারে সেক্ষেত্রে আপনার দিনের সময়ের অপচয় হবে । বিথঙ্গল যাওয়ার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। অর্থাৎ হাওড়ে যতদিন বর্ষার পানি থাকে ততদিন । হাওড়ের পানি শুকিয়ে গেলে সেখানকার সৌন্দর্য অন্য রুপ নেবে ঠিকই তবে যাতায়াত প্রচন্ড কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে । লক্কর-যক্কর চাঁদের গাড়িতে করে যেতে যেতে তখন হাঁড়-মাংস সব একাকার হয়ে যাবে । তবে আমি সাজেস্ট করবো হবিগঞ্জে যদি একরাত থেকে যান তো পরের দিন হবিগঞ্জের চা বাগান আর সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার রাইডে চড়েও ঘুরে আসতে পারেন । হবিগঞ্জ শহরে থাকার জন্যে মোটামুটি সস্তায় ভালো মানসম্পন্ন হোটেল রয়েছে । বিথঙ্গল এবং সাতছড়ি হবিগঞ্জ জেলার দুই প্রান্তে অবস্থিত এবং দুটোই প্রকৃতি দুটি সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ । ভাটি এলাকা বিথঙ্গলের হাওড় আর সাতছড়ির টিলা সমৃদ্ধ বন আর চা-বাগান দেখতে আপনার এক দিন করে সময় ব্যায় করতে হবে । তাই দুইদিন সময় হাতে নিয়ে আসলে প্রকৃতির দুটি রূপ একসাথে দেখার এক অবিস্মরণীয় অভীজ্ঞতা হয়ে যাবে আপনার ।

পরিশেষে একটি কথা, আমি লেখার শুরুতেই বলেছিলাম বিথঙ্গল এখনো নগর সভ্যতার করালগ্রাসে পরেনি, তাই একটি একান্ত অনুরোধ থাকবে আপনাদের কাছে যে, ভ্রমনপথের ময়লা-আবর্জনা হাওড়ে ফেলে বিথঙ্গলের পবিত্রতা নষ্ট করবেন না । শুধু ময়লা আবর্জনাটাও বড় কথা নয়, অযথা হৈ-হুল্লোর করে হাওড়ের নির্জনতাও নষ্ট করা উচিত নয় । ওখানকার মানুষ খুবই অতীথিপরায়ণ । আপনাদের অতিরিক্ত উদ্দাম চলাফেরায় তাদের মনে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে যা পরবর্তীতে ভ্রমনেচ্ছু টুরিষ্টদের জন্যে সুখকর নাও হতে পারে ।

Leave a Comment