ঢাকা থেকে সাজেক কিভাবে যাবেন? 10/01/2018


=>দুটি পদ্ধতিতে আমি এই ব্যাপারটাকে সাজিয়েছি। নিচে বর্ণনা করছিঃ

১) ঢাকা থেকে সাজেক যেতে হলে শান্তি পরিবহনে করে ঢাকা থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ির (অনেকে রাঙ্গামাটির মধ্যে পড়েছে বলে) দীঘিনালা যাবেন। শান্তি পরিবহনই একমাত্র পরিবহন যারা দীঘিনালা পর্যন্ত যায়। ভাড়া পড়বে ৫৫০-৫৮০ টাকার মতো। দীঘিনালা থেকে সাজেকগামী গাড়ি (চান্দের গাড়ি) ভাড়া করতে হবে। ওরা ৭/৮ হাজার টাকা চাইবে। মুলামুলি করতে হবে। ৫/৬ হাজার টাকায় রাজি করানো সম্ভব যখন অফ সিজন চলে। সিজনে আরও বেশি চায় ওরা। সকাল ১১টার আর্মি এস্করটে আপনাদের গাড়ি সহ অন্যান্য যাত্রীবাহী গাড়ি সাজেকের উদ্দেশে রওনা দিবে। আরেকটা আর্মি এস্করট পাবেন বিকাল ৩টার দিকে। যদি আপনি সাজেকে একদিন থাকেন তবে গাড়ি আপনাদের সাথে একদিন থাকবে ওখানে। আর যদি সেদিনই ফিরে আসতে চান তবে ১১টার এস্করটে সাজেক গিয়ে ৩টার এস্করটে ফিরতে হবে (আমি যতটুকু জানি আর কি। এই ব্যাপারটা আমি শিওর না।)। দিনে গিয়ে দিনেই সাজেক থেকে ফিরে আসলে সাজেক যাওয়া অর্থহীন। সাজেকের আসল মজা বিকাল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত। পরের দিন ফেরার সময় সকাল ১১টার এস্করটে গাড়ি আপনাকে দীঘিনালা নামিয়ে দিবে। এমনভাবে ড্রাইভারের সাথে চুক্তি করতে হবে যেন ড্রাইভার আপনাকে সাজেক, কংলাক পাড়া, কমলা বাগান ইত্যাদি ঘুরিয়ে আনে। অবশ্যই সাজেক থেকে ফেরার পথে হাজাছরায় গাড়ি থামিয়ে হাজাছরা ঝর্ণায় যেতে ভুলবেন না।

২) ঢাকা থেকে সাজেক যাওয়ার দ্বিতীয় পদ্ধতি হল শান্তি পরিবহনে সিট না পেলে অন্য যেকোনো খাগড়াছড়িগামী পরিবহন বাসে করে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাবেন। সুপারভাইজারকে বলবেন শাপলা চত্বর নামিয়ে দিতে। সেখান থেকে দীঘিনালাগামী গাড়িতে করে দীঘিনালা যাবেন। ৫০ টাকা জনপ্রতি ভাড়া নিবে। সেখান থেকে বাকী সব উপরের পদ্ধতির মতো। আর কেউ যদি দীঘিনালা থেকে ভেঙ্গে যেতে চান তবে আপনাকে যেতে হবে বাঘাইআটি। ২০-২৫ টাকা ভাড়া নিবে। সেখান থেকেও সাজেকগামী ডিরেক্ট গাড়ি পাবেন। ভাড়া প্রায় দীঘিনালা থেকে সাজেকের মতোই পড়বে। আবার বাঘাইআটি থেকে লোকাল যাত্রী নেয় কিছু গাড়ি। সেসব গাড়িতে না উঠাই ভালো। রিস্ক থাকে। ১৫০ টাকা করে জনপ্রতি ভাড়া নেয়। এসব গাড়িতে গেলে অনেকসময় আর্মিরা নামিয়ে দেয়। ওসব গাড়ি কেবল মাত্র স্থানীয় বাসিন্দাদের সাজেক-দীঘিনালা যাতায়াতের মাধ্যম।

**বি.দ্র. ১-> দীঘিনালা/বাঘাইয়াটি থেকে সাজেকগামী সিএনজি, মোটরসাইকেল ও পাবেন। ভাড়া তুলনামূলক কম। তবে সেগুলোতে না যাওয়াই ভালো। কেননা সাজেকের রাস্তা অনেক উঁচু-নিচু, বাঁকা বাক রয়েছে। শক্তিশালী ইঞ্জিনওয়ালা গাড়ি এসব রাস্তায় চলাচলের জন্য আদর্শ। মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজিতে রিস্কটা বেশি। আমরা দেখেছিলাম খাড়া ঢাল উঠতে গিয়ে একটা মোটরসাইকেল যাত্রী সহ রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল। সুনসান এলাকা। এরকম রিস্ক না নেয়াটাই ভালো আমি মনে করি।

**বি.দ্র. ২-> সাজেক গিয়ে যদি রাতে থাকার প্ল্যান থাকে তবে অবশ্যই সাজেকে থাকার জন্য কটেজ, রিসোর্ট কিংবা মোটেল আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখবেন। এসব জায়গায় থাকার জন্য দিন প্রতি ভাড়া গুনতে হবে। এখানেও আপনাকে মুলামুলি করতে হবে। যত কমে নিতে পারেন তত খরচ কমাতে পারবেন। তবে রুইলুই পাড়ার দিকে থাকার জন্য ভাড়া নেবার চেষ্টা করবেন। হাতের কাছে দোকান-পাট পাবেন। অবশ্য কংলাক পাড়ায় নাকি অনেক আদিবাসী তাদের ঘরেও থাকতে দেয় টাকার বিনিময়ে। এটা আমি শুনেছি।

**বি.দ্র. ৩-> স্থানীয় হোটেলগুলোতে খেতে পারবেন। তবে কি খাবেন তা আগে থেকে অর্ডার করতে হবে। খাওয়া খরচ একটু বেশি।

**বি.দ্র. ৪-> কাপল ছাড়া যদি বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যান তবে ৮-১০ জনের গ্রুপে যাবেন। খরচ খুব কমে যাবে। এছাড়া ৪-৫ জনের গ্রুপ হলে সাজেকগামী আরেকটা গ্রুপ খুঁজে নিবেন। এরকম অনেকেই করে থাকে। এতে করে যাতায়াত ভাড়াটা কমে যাবে।

**বি.দ্র. ৫-> সাজেকে ইলেক্ট্রিসিটি নাই। সোলার পাওয়ারে বাল্ব জ্বালায় সেখানে। তাই অবশ্যই সাথে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যাবেন মোবাইল ফোন চার্জ দেয়ার জন্য।

**বি.দ্র. ৬-> সেখানে রবি ও টেলিটকের সিম ছাড়া অন্য কোন সিমে নেটওয়ার্ক পায় না। সকলের সাথে যোগাযোগ রক্ষার্থে রবি সিম নিয়ে যেতে পারেন।

**বি.দ্র. ৭-> সবচেয়ে আসল কথা যেটা সেটা হল সাজেকে পানির খুবই অভাব। আদিবাসীরা অনেক নিচ থেকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য কষ্ট করে পানি তোলে ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে। অবশ্যই সেখানে পানির অপচয় করবেন না আর অবশ্যই অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমান খাবার পানি সাথে করে নিয়ে যাবেন।

Leave a Comment